হাঁসকে যে সকল খাদ্য খেতে দেওয়া হয় তার প্রায় ৫০-৬০ ভাগই শর্করা। এটা দেহের সর্বাধিক শক্তির চাহিদা পূরণে সক্ষম।
শর্করা জাতীয় খাদ্য অন্ত্রের বিচলনের মাধ্যমে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
শর্করা জাতীয় খাদ্য জারিত হয়ে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে যা সজীব বস্তুর জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনে প্রয়োজন ।
যকৃত ও পেশীতে শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় ।
চর্বি বা তেল জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ-
হাঁসকে যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় তাতে ১৫-২৫ ভাগই চর্বি বা তৈল জাতীয় পদার্থ ।
তৈল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য উপাদানের সাথে ভিটামিন এবং অপরিহার্য তৈল/চর্বি জাতীয় পদার্থ গৃহীত হয়ে শরীর বৃদ্ধির কাজে অংশ নেয়।
এ সব উপাদানে এ, ডি, ই, কে (Vitamin - A, D, E, K) জাতীয় ভিটামিন দ্রবীভূত থাকতে পারে।
হাঁসের বিভিন্ন অংগে বিশেষত চামড়ার নিচে চর্বি জাতীয় খাদ্য সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনে খাদ্যের অভাব পূরণ এবং দেহের ক্ষয় নিবারণ করে ।
দেহের কর্মশক্তি ও উত্তাপশক্তি বৃদ্ধি করাই চর্বির প্রধান কাজ ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ-
হাঁসের খাদ্যের শতকরা ১৮-২২ ভাগ আমিষ ।
আমিষ বা প্রোটিন প্রোটোপ্লাজমের অন্যতম উপাদান ।
দেহের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করা আমিষের প্রধান কাজ ।
আমিষ ডিম ও মাংস উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
পেপসিন, ট্রিপসিন প্রভৃতি জারক রস নিঃসরণের জন্য আমিষ অপরিহার্য।
আমিষ অপরিহার্য এমাইনো এসিডের চাহিদা পূরণ করে ।
রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
নিউক্লিও প্রোটিনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে ।
খাদ্যপ্রাণ/ভিটামিন জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ-
ভিটামিন এমন এক বিশেষ ধরনের জৈব যৌগ যা প্রাণীদেহে খুবই অল্প পরিমানে প্রয়োজন কিন্তু এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। এরা বিপাকীয় কার্যাবলীতে জৈব প্রভাবক এর ভূমিকা পালন করে ।
হাঁসের দেহের প্রয়োজনীয় কয়েকটি খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিনের নাম, উৎস ও প্রয়োজনীয় কার্যাবলী দেওয়া হলো-
মিনারেল/খনিজ জাতীয় খাদ উপকরণের কাজ -
প্রাণিদেহের রক্ত ও অন্যান্য তরল পদার্থের গঠনগত ধর্ম বজায় রাখে ।
প্রাণিদেহের অস্থি গঠনে সহায়তা করে।
পালক, নখ তৈরিতে সহায়তা করে।
ইনসুলিন নামক প্রাণরস গঠন করতে প্রয়োজন হয় ।
ইহা হাড় গঠনে সহায়তা করে ।
পানির কাজ-
কোন জীবই পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই পানির অপর নাম জীবন। জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমে ৬৫- ৯৫% পানি থাকে। হাঁসের খামারে সরবরাহকৃত পানির গুণগতমান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরবরাহকৃত পানি স্বাভাবিক তাপের ও স্বাদের, পরিষ্কার ও রোগ জীবাণুমুক্ত হতে হবে যাকে বিশুদ্ধ পানি বলে। পানির pH ৫-৭ এর মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়।
পানি পিপাসা নিবারণ করে ।
দেহকে সতেজ রাখে।
দেহের তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখে।
বিভিন্ন খাদ্যবস্তু হজম ও শোষণে সাহায্য করে।
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
দেহের তরল পদার্থের pH এর মান নিয়ন্ত্রণ করে ।
খাদ্যবস্তু থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিকণা দেহের কোষে পৌঁছাতে সাহায্য করে ।
জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে ।
পানি উত্তম দ্রাবক হিসেবে কাজ করে।
হাঁসের পানি গ্রহণের পরিমাণ প্রভাবিত করার বিষয়সমূহ
একটি হাঁস যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করে স্বাভাবিক নিয়মে এর দ্বিগুণ পানি গ্রহণ করে থাকে। যে সমস্ত বিষয় হাঁসের পানি গ্রহণকে প্রভাবিত করে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
বেশি শক্তি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে বেশী পানি গ্রহণ করে থাকে।
আমিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণ যথা সয়াবিন, মাংস, শুটকি মাছ, হাঁড়ের গুড়া খেলে হাঁস পানি বেশী খায়।
খাবারে আঁশ জাতীয় খাদ্য উপাদানের পরিমাণ বাড়লে পানির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে ।
২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে আদর্শ তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এই তাপমাত্রার উপরে প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পানি গ্রহণের পরিমান ৭% বেড়ে যায় ।
পানির Ph ৫ এর নিচে নেমে গেলে বা ৭ এর বেশি বেড়ে গেলে পানি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।
পানি সরবরাহের পদ্ধতির উপরও পানি গ্রহণ অনেকাংশে নির্ভর করে। ট্রাফ সিস্টেমে প্রতিদিন ২৫০ মিলি পানি লাগে যেখানে নিপল ড্রিংকার পদ্ধতিতে ১৬৬ মিলি পানি লাগে ৷
বয়সের কম বেশীর জন্য পানি গ্রহণ কম বেশী হতে পারে। ।
উৎপাদনের উপর নির্ভর করে পানি গ্রহণ কম বেশী হতে পারে।